
ঢাকা আরিচা মহাসড়ক ধরে সাভার অতিক্রম করে চার কিলোমিটারের মত পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবারিত সবুজ লীলা
ভূমির/প্রান্তরের শুরু। শুরুতেই দূর্গ সদৃশ্য লাল ইটের চার দশকের পুরনো অট্টালিকাটিই মীর মশাররফ হোসেন হল। সীমানা শুরুর সামান্য পরেই আরিচা মহাসড়ক থেকে বা দিকে প্রবেশ করেছে পিচের একটি রাস্তা। ঢাকা থেকে আরিচা যাবার পথে এটিই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট হলেও সবার কাছে ২নং গেট হিসাবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার দিক থেকে ছাত্রদের হল হিসাবে দ্বিতীয় হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ে ২নং হল নামে পরিচিত পেয়েছিল এই হল। সে-সূত্রেই গেটটি আজও ২নং গেট নামে পরিচিত। মহাসড়ককে স্পর্শ করেই একটি আধুনিক গুরত্বপূর্ণ শৈল্পিক স্থাপত্যের নিদর্শন হিসাবে চোখে পড়ে। ১৯৭৩ইং সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এই হলটির। ১৯৭৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বরে হলের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ছাত্র বসবাস শুরু করে। হলের প্রথম প্রভোস্ট হিসাবে রসায়ন বিভাগের ডঃ মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭৩ সালের ৬ আগষ্ট দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ইং সালের ১৪ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে উদার মানবিক মুল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির রূপকার, অনন্যসাধারণ সাহিত্য-শিল্পী “বিষাদ সিন্ধু” উপন্যাসের রচয়িতা অমর কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হলটির নামকরণ হয় ‘মীর মোশাররফ হোসেন হল’। দীর্ঘ বিশ বৎসর পর হল প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের ২১৭নং সভায় হলের নামের বানান সংশোধন করে মীর মশাররফ হোসেন হল করা হয়।
২ একর ৮১ শতাংশ জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই হল। বলা চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একক, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সত্ত্বা নিয়ে স্বগৌরবে প্রকৃতির মায়াময় পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেন হল। প্রকৃতির দূহিতা প্রজাপতির আকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে এই হলের অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপত্যিক নমুনা তৈরি করেন মেসার্স বাস্তুকলাবিদের পক্ষে বাংলাদেশের স্বনামধন্য স্থপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নকশা প্রণেতা মোঃ মাজহারুল ইসলাম। মীর মশাররফ হোসেন হলের স্থাপত্য নকশা প্রজাপতির দু’টি ডানার আকৃতি বিশিষ্ট। উভয় ব্লক-এর ভিতরের চত্বরে রয়েছে ত্রিভূজ আকৃতির সুন্দর ফুলের বাগান। প্রজাপতি-সদৃশ্য হলের প্রজাপতির দক্ষিণ পক্ষ‘এ-ব্লক‘ ও উত্তর পক্ষ ‘বি-ব্লক‘ নামে খ্যাত। হলে মোট কক্ষ সংখ্যা ৪৯০টি (২৬৪টি ১ আসন বিশিষ্ট ও ২২৬টি দুই আসন বিশিষ্ট) আছে। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য বরাদ্ধ ৪৮৫টি কক্ষ। বাকি ০৫টি কক্ষের মধ্যে ২টি দোকান, ১টি সেলুন, ১টি লন্ডি ও ১টি অতিথী কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ২টি ডাইনিং, ২টি ক্যান্টিন, ১টি মিলনায়তন কক্ষ ও ১টি মসজিদ রয়েছে। মিলনায়তন কক্ষে ছাত্রদের বিনোদনের জন্য ০২টি টেলিভিশন, ক্যারাম বোর্ড, টেবিল টেনিস, পত্রিকা, ম্যাগাজিন দাবা খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদের জন্য একটি পাঠাগার আছে। বাঁধন, মীর মশাররফ হোসেন হল ইউনিট কে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা ০১টি কক্ষ ও আসবাবপত্র দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর তাদের নবীন বরণও রক্তদান কর্মসুচী অনুষ্ঠানে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
বর্তমানে এ হলে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর, এম ফিল এবং পিএইচডি ছাত্রসহ মোট ১৮৫৫ জন ছাত্র রয়েছে। হলের উত্তর পার্শ্বে সুন্দর লেক থাকায় এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হল সংলগ্ন ১২জন আবাসিক শিক্ষকের বাসভবন, হল ছাত্র সংসদ অফিস এবং হলের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে প্রভোস্টের দ্বি-তল বাসভবন অবস্থিত। হল সংলগ্নই রয়েছে আবাসিক শিক্ষকদের আবাসন, হলের প্রবেশ দ্বারের সামনে রয়েছে ২০ শতাংশ জমির উপর হল প্রশাসনের দ্বিতল অফিসভবন। এর নিচ তলায় রয়েছে প্রাধ্যক্ষের অফিস কক্ষ ও হলের প্রাশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরো ০৪টি কক্ষ।
দ্বিতীয় তলায় রয়েছে হল ছাত্র সংসদের অফিস কক্ষ। আবাসিক ছাত্রদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কমনরুম ও প্রতি তলায় ওয়াই ফাই এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বর্তমানে হল প্রশাসন পরিচালনার জন্য ১ জন প্রভোস্ট, ০২ জন ওয়ার্ডেন, ৪ জন আবাসিক শিক্ষক, ২ জন সহকারী আবাসিক শিক্ষক, ২ জন সহকারী রেজিস্ট্রার, ২ জন প্রশাসনিক অফিসার, ২৯ জন তৃতীয় শ্রেণী, ২৪ জন ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী এবং ০৮ জন অনিয়মিত ডাইনিং কর্মচারী রয়েছে।